লাল মুনিয়ার ইতিকথা

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৬:২৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:২৫ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

red-muniaপ্রায় ৮-১০ বছর আগের কথা। শাহবাগের মোড়ে এক পাখি বিক্রেতার সাথে দেখা। তার ছোট খাঁচায় গাদাগাদি করে রাখা অদ্ভুত সুন্দর দেখতে ছোট এক ধরনের পাখি।

এরকম টকটকে লাল রঙের পাখি আগে কখনো দেখিনি। তখন পাখি তেমন একটা চিনতাম না। বিক্রেতারও পাখিটির সঠিক নাম জানা ছিল না।

তাই পাখিটির অতুলনীয় সৌন্দর্য অবলোকনের পাশাপাশি এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে বিক্রি হতে দেখে দুর্ভাগা পাখিগুলোর জন্য মন খারাপ হওয়া একটা মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম।

তারপর একসময় সেই সুন্দর পাখিটির পরিচয় জানলাম। সেটি ছিল আমাদের দেশে পাওয়া মুনিয়ার ৬টি প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও অপেক্ষাকৃত বিরল প্রজাতির লাল মুনিয়া। ইংরেজি নাম Red Avadavat, Red Munia বা Strawberry Finch। বৈজ্ঞানিক নাম Amandava amandava।

সত্যি বলতে কি এদেশের বেশিরভাগ পাখিপ্রেমীর কাছেই লাল মুনিয়া হচ্ছে পরম আরাধ্য। আর সে সুযোগ যে হঠাৎ করে এভাবে ঢাকা শহরেই মিলবে তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। যদিও ঢাকা শহরের হাতেগোণা কয়েকটা জায়গায় এ পাখি দেখা যায় বলে খবর পেয়েছিলাম।

লাল মুনিয়া ছোট আকৃতির পাখি, দৈর্ঘ্য ১০ সেমি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটি দেখতে হয় চোখধাঁধানো সুন্দর। তখন পুরুষটির গায়ের রঙ থাকে মূলত গাঢ় লাল। তবে চোখের পাশ, তলপেট ও লেজ কালো আর ডানা গাঢ় বাদামি রঙের হয়। সারা শরীরে বিশেষ করে বুক, ডানা আর পার্শ্বদেশে সাদা ফোঁটা থাকায় একে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগে।

ছোট ত্রিভুজাকৃতির ঠোঁট সিঁদুরে লাল রঙের, পা ও পায়ের পাতা গোলাপি। প্রজনন মৌসুমের বাইরে পুরুষ পাখির মেয়ে পাখির সাথে অনেক সাদৃশ্য আছে। তখন এদের ঊর্ধ্বাঙ্গ নিষ্প্রভ বাদামি, পুচ্ছদেশ লাল ও নিম্নাঙ্গ ফ্যাকাশে সাদা বর্ণের হয়। তবে মেয়ে পাখিটি পুরুষটির চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল বর্ণের হয়, গাঁয়ে সাদা ফোটাও কম থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনেকটা হালকা হলদেটে বাদামি, লেজ কালচে, ঠোঁট হলদেটে, পা ও পায়ের পাতা গোলাপি। পাখিটির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের ঠোঁটের রঙ পরিবর্তিত হয়।

red-munia-pairলাল মুনিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। এরা মূলত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের হাওর ও ঘাসবনে বাস করে।

ঢাকায় আমরা যে পাখিগুলো দেখেছি সেগুলো কি প্রাকৃতিকভাবেই এখানে এসেছে নাকি খাঁচা থেকে পালানো পাখিরাই এখানে একটি ছোট পপুলেশন গড়ে তুলেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশ জুড়ে হলেও বাংলাদেশে পাখিটির অবস্থা খুব একটি ভালো নয়।

মূলত খাঁচায় পোষার জন্য অবৈধভাবে ধরার ফলে ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে আমাদের দেশে এদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ঢাকার পাখিগুলোও তীব্র আবাসস্থলের সংকটে ভুগছে। এ পাখিগুলো মূলত বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের যেসব প্লটে এখনো বিল্ডিং উঠেনি বিধায় ঘাসবন জন্মেছে সেসব জায়গার উপর নির্ভর করেই টিকে আছে।

কিন্তু ঢাকায় এসব খালি জমির সংখ্যা খুব দ্রুত কমছে যার ফলে এ সুন্দর পাখিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই ইট-কনক্রিটের জঙ্গলে শত প্রতিকূলতার মাঝেও কীভাবে যে এরা টিকে আছে সেটাই এক বিস্ময়। দিনকে দিন আমরা হয়ত তথাকথিত শহুরে আর সভ্য হচ্ছি কিন্তু এর বিনিময়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টিগুলোকে।

মানুষের সর্বগ্রাসী লোভের বলি হয়ে আমাদের দেশের আরো অনেক প্রজাতির পাখির ন্যায় লাল মুনিয়ার অস্তিত্বও আজ হুমকির মুখে। এখনই এদেরকে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে চমৎকার সুন্দর এ পাখিগুলো হয়ত একদিন চিরতরে হারিয়ে যাবে আমাদের দেশ থেকে। সেরকম অশুভ দিন যত দেরিতে আসে আমাদের প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য ততই মঙ্গল।

প্রতিক্ষণ/এডি/রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G